বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে কাজের সুযোগ পায় মাত্র ৭ লাখ। বাকিরা কাজের সুযোগ না পেয়ে অথবা কাঙ্ক্ষিত জব না পেয়ে বেকার থাকে। প্রতি বছর এর সাথে নতুন নতুন বেকার যুক্ত হচ্ছে। পরিসংখ্যানগত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে কর্মক্ষম যুব সমাজের একটি বড় অংশ ছুটে চলে সরকারি চাকুরীর পিছনে। এই সেক্টরে সিটের সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রতি বছর চাকুরীপ্রার্থী বেড়েই চলেছে। যেখানে ১০ বছর আগেও বিসিএস এর জন্য প্রার্থী ছিলো ১ লক্ষ বা তারও কম, সেখানে ২০১৯ সালের বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলো প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ ! অথচ সেখানে চাকুরীর সুযোগ পায় প্রায় ২২০০ জন এর মতো। সরকারি, আধা-সরকারি অন্যান্য সেক্টরগুলোতেও একই অবস্থা। ১০/২০ টি পদের জন্য লড়াই করে ১ লক্ষে মতো প্রার্থী। ২০১৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় ৪ লক্ষের উপর প্রার্থী প্রতিযোগিতা করে। এইসব কোনো গল্প থেকে পাওয়া সংখ্যা না। পরিসংখ্যানগুলো দেখলে এটিকে প্রতিযোগিতা না বলে অস্থিরতা বলা যায়।
যে ছেলে বা মেয়ে বছরের পর চেষ্টা করে কোনো সরকারি বা আধা-সরকারি চাকুরী পায়না, তার মানসিক অবস্থা কি কেউ ভেবে দেখে? তার পরিবার কি সে ছেলে বা মেয়ের কষ্ট বুঝতে চায়? ৩০ বছরে গিয়ে যখন তার চাকুরীর বয়স শেষ হয়ে যায়, সে তখন কি করতে পারে? যে বা যারা পরিবার থেকে আর্থিক সাপোর্ট পায়, তারা হয়তো নিজেদের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারেন। কিন্তু যাদের এই সাপোর্ট নেই, তার কি করতে পারেন?
বর্তমানে ডিটিলাইজেশনের যুগে ফ্রিল্যান্সিং বেকারত্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজেকে যুক্ত করার আগে জানতে হবে ফ্রিল্যান্সিং বলতে আসলে কি বুঝায়। ফ্রিল্যান্সিং বলতে বুঝায় যেকোনো একটি কাজে দক্ষ হয়ে মুক্তভাবে নিজের মতো করে কাজ করা। যেমন – আপনি খুব ভালো কন্টেন্ট লিখতে পারেন। নিজের পরিচিত মাধ্যমে কাজ যোগাড় করে অথবা বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ পেয়ে নিজের সময়মতো ক্লায়েন্টকে কাজ করে দিলেন। অথবা আপনি ভালো ডিজাইন এর কাজ পারেন। নিজের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ব্যানার ডিজাইন, ম্যাগাজিন ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইনগুলো আপনি পেমেন্ট এর বিনিময়ে করে দিলেন। এই যে নিজের সুবিধামতো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে, নিজের সুবিধামতো কাজ করাকে বলে ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে নিজের ইচ্ছামতো, সুবিধামতো জায়গায় বসে কাজ করা যায়।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি যেকোনো বয়সে, যেকোনো সময় শুরু করতে পারেন। ৩০ বছর বয়সে আপনার সরকারি, আধা-সরকারি চাকুরির সময় শেষ হয়ে গেলেও ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য আপনার রাস্তা খোলা। সাফল্যের জন্য শুধু প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম। পরিশ্রম ব্যতিত সাফল্য কখনোই আপনার হাতে ধরা দিবে না।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘ডিজিটাল ইকোনমাই রিপোর্ট-২০১৯’ এর তত্থ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে প্রতি বছর দেশে ১০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসছে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা এবং প্রয়োজনীয়তা কি পরিমান বেড়েছে তা এই রিপোর্ট দেখলেই বুঝা যায় – বাংলাদেশে ২০১১ সালে যেখানে মাত্র ১০ হাজার ফ্রিল্যান্সার কাজ করতো, বর্তমানে সেখানে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
সাফল্যের প্রধান এবং একমাত্র শর্ত হচ্ছে নিজেকে কাজের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা। তাই যে সেক্টরে যে কাজই করেন না কেনো, স্কিল ডেভেলপমেন্ট এ মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
শিখবে সবাই এর শিক্ষার্থীদের সাফল্য দেখুন শিখবে সবাই ফেইসবুক কমিউনিটি তে। https://www.facebook.com/groups/shikhbeshobai/