আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে প্রায় প্রতিটি নুন্যতম সামর্থ্যবান ঘরেই রয়েছে মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাব এর মতো প্রযুক্তিপন্য। এসবের মাধ্যমে মানুষ সারা বিশ্বের খোজ-খবর পাচ্ছে ঘরে বসেই। ব্যবসা থেকে শুরু করে বাজার করা, সবই হচ্ছে এখন অনলাইনে। দিন দিন মানুষের সবকিছু সহজ হয়ে যাচ্ছে। কষ্ট করে কিছু পাওয়া থেকে মানুষ সরে আসছে। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে শক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং।
ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে কি বুঝায়?
সাধারনত, প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সকল মার্কেটিং করা হয় তাই ডিজিটাল মার্কেটিং। বিস্তারিত বললে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত মাধ্যম যেমন স্যোশাল মিডিয়া, এসইও, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মোবাইল মার্কেটিং, ই-কমার্স, ইমেইল মার্কেটিং সহ আরো নানাবিধ উপায়ে যে মার্কেটিং করা হয়, তাই মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং। প্রতিদিন প্রযুক্তিগতভাবে যেমন বিশ্ব উন্নত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা এবং কাজ করার সুযোগ।
কি কি নিয়ে কাজ করা যায়?
ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করার আগে জানতে হবে কি কি বিষয় নিয়ে এই সেক্টরে কাজ করা যায়। তাহলে বিষয়গুলো এনালাইসিস করে এবং যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। আপনি যেকোনো একটি সাইডে যেমন কাজ করতে পারবেন, তেমনি একাধিক বিষয় নিয়েও কাজ করতে পারবেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
কন্টেন্ট মার্কেটিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট
ইমেইল মার্কেটিং
ব্লগিং
ই-কমার্স
অনলাইন শপ
গুগল এনালাইটিক্স এবং গুগল এডস
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এসইএম)
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সম্ভাবনা
মূলত ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যেই বিশ্ব চিনতে শুরু করেছিলো নতুন একটি টার্ম “ডিজিটাল মার্কেটিং।” সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন বিষয়, মাধ্যম যোগ হয়ে এখন বিশাল কর্মক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গতানুগতিক ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং এর পাশপাশি ডিজিটাল মাধ্যম সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে।
বড়-বড় ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠান যারা ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ অভ্যস্ত ছিলেন, তারা বিগত বছরগুলো থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতি অনেক আকর্ষিত হচ্ছেন। এর কারন তরুন থেকে বৃদ্ধ সবাই প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হওয়া। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বড় কোম্পানিই ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য লোক নিয়োগ করে আলাদা বিভাগ চালু করেছেন। এই বিভাগ কোম্পানির পণ্য এবং এই সম্পর্কিত তথ্য স্যোশাল মিডিয়া, এসইও সহ আরো নানা উপায়ে কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে গড়ে উঠছে প্রচুর অনলাইন শপ। দেশি-বিদেশী এই শপগুলোর ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজন অনেক ডিজিটাল মার্কেটার। তারা পণ্যের জন্য কন্টেট রাইটিং থেকে শুরু করে স্যোশাল মিডিয়ায় উপস্থিতি নিশ্চিত করেন যাতে টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে পৌছায়। এই ধরনের মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজন পড়ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এ অভিজ্ঞ লোকজন।
বিশ্বে সব মিলিয়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ওয়েবসাইট আছে যার প্রতিটির জন্য প্রয়োজন সঠিক উপায়ে এসইও করা। এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট গুগলে র্যাংক করে প্রথম পেইজে নিয়ে আসা হয়, যাতে করে সহজে মানুষের কাছে পৌছায়। ওয়েবসাইট এর সংখ্যা যেমন প্রতিদিন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এসইও জানা লোকের চাহিদা।
যাদের লেখালেখির হাত ভালো, সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারেন, ডিজিটাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে তাদের ভালো করার সুযোগ রয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে পণ্যের প্রচার এবং প্রসারের জন্য প্রয়োজন ভালো কন্টেন্ট। প্রতিটি ওয়েবসাইট এর জন্য প্রয়োজন হয় কন্টেন্ট। দিন যতো এগিয়ে যাচ্ছে, কন্টেন্ট রাইটারদের কাজের ক্ষেত্র এবং সুযোগ সমানতালে বেড়ে যাচ্ছে।
আপনি কি অনুমান করতে পারেন প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ইমেইল পাঠানো হয় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ পাঠানো হয় প্রোডাক্ট এর প্রচার এবং প্রসারের জন্য। যারা ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এবং কাজ করতে পারেন, তারা অনেক ভালো করছেন। কারন, এর চাহিদা দিন দিন আরো অনেক বাড়ছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজের ক্ষেত্র
ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজের ক্ষেত্র সুবিশাল। কাজ সম্পর্কে ভালো দক্ষতা থাকলে যেকোনো সেক্টরেই তা ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশ এবং বিশ্বে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করার জন্য কোথায় কোথায় সুযোগ রয়েছে।
লোকাল জবঃ ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই লোকাল বড়-ছোটো কোম্পানিগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। কারন কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং এর জন্য বেছে নিচ্ছেন অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। এতে করে কাজের সুযোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদা। পাশাপাশি ডিজিটাল সার্ভিস কে কেন্দ্র করে প্রচুর এজেন্সি গড়ে উঠেছে, সেখানেও বাড়ছে কাজের সুযোগ। এই এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বাড়ছে ফ্রিল্যান্স ভিত্তিক কাজ।
অনলাইন ব্যবসাঃ অনেকেই আছেন ডিজিটাল মার্কেটিং ভালোভাবে শিখে প্রোডাক্ট এর সোর্স ঠিক করে অনালাইন ব্যবসায় নেমে যাচ্ছেন। কারন তারা খুব সহজেই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে পারছেন, পণ্যকে কাস্টমারের কাছে পৌছাতে পারছেন, পণ্য সম্পর্কে মানুষকে সহজে জানাতে পারছেন, যাবতীয় সব কাজই নিজের মতো করে করতে পারছেন। মানুষ এখন আর আগের মতো দোকানে যেতে চায় না, ভিড় এড়িয়ে চলে, আরাম খুজে। তাই অনলাইন শপ তাদের পছন্দের জায়গা। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছেন অনলাইন শপ এর মালিক এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এ অভিজ্ঞ লোকজন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসঃ অনলাইনের জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ফাইভার, আপওয়ার্ক, পিপল পার আওয়ার ছাড়াও অন্যান্য যেসকল প্ল্যাটফর্ম আছে, সব জায়গাতেই ডিজিটাল মার্কেটিং এ অভিজ্ঞ লোকজনের চাহিদা অনেক। বিশ্বজুড়েই রয়েছে ই-কমার্স ব্যবসা, অনলাইন মার্কেটিং এর প্রচুর চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন দক্ষ লোকের। এই উদ্দেশ্যে কাজ নিয়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে হাজির হচ্ছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্লায়েন্ট। আর কাজগুলো নিয়ে নিজেদের দিন দিন উন্নত করছেন দক্ষ ফ্রিল্যান্সাররা।
এফিলিয়েশনঃ এফিলিয়েশন বলতে বোঝায়, নিজের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অন্য কোম্পানির প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং করে এবং বিক্রি করে বিনিময়ে কমিশন লাভ করা। এছাড়াও কোনো ভিজিটর যদি এফিলিয়েটর এর ওয়েবসাইট এ ভিজিট করে কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এবং যেকোনো পণ্য ক্রয় করে, তখন সে কোম্পানি ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে হিসাব করে রাখে। এভাবে একজন এফিলিয়েটর প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
সকল পেশাজীবীর জন্যঃ বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং শুধুই ইনকাম করার জন্য বা ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ার জন্যই শিখতে হবে না। ব্যক্তিগত, অফিস এবং ব্যবসায়ের টুকটাক কাজের জন্যও শিখে রাখা প্রয়োজন। একটি কোম্পানির আইটি, মার্কেটিং, এইচআর, এডমিন, সেলস সহ সকল বিভাগের লোকজনের জন্যই এই স্কিল প্রয়োজন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা নেই। প্রথমত, কম্পিউটার চালানো পারতে হবে এবং বেসিক অপারেটিং জানতে হবে। তারপর যেটা প্রয়োজন, ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য যে সকল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হয়, সেগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজন মার্কেটিং এবং সেলস সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান থাকা, প্রচুর পরিমাণ রিসার্চ করার মতো ধৈর্য এবং পরিশ্রম করার মানষিকতা। সবকিছুর পরে একজন মার্কেটিং এর মানুষের ইংরেজি বিষয়ে যোগাযোগ করার মতো ভাষা জানা থাকতে হবে।
কম্পিউটার কনফিগারেশন
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য খুব বেশী কনফিগারেশন এর প্রয়োজন নেই। নূন্যতম ৪ জিবি র্যাম এবং কোর আই ৩ প্রসেসর হলেই মোটামুটি ভালোভাবে কাজ করা যাবে। তবে এর চেয়ে বেশী কনফিগারেশন হলে সেটা আপনার কাজের গতি অনেক বাড়িয়ে দিবে।
বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোনো বিকল্প নেই। উপার্জনের জন্য হোক কিংবা নিয়মিত কাজ করার জন্য হোক, একটু সময় করে সবারই ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বেসিক ধারণা থাকা উচিত।